মেধাবী সাবিবা ও তার অটো-প্যারাসুটযুক্ত প্লেন
সাবিবা একজন মেধাবী ছাত্রী। সে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইইই(EEE) নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছে। তবে এই বিষয়ে পড়ার পিছনে একটি ছোট ঘটনা আছে । যদিও সাবিবার মায়ের ইচ্ছে ছিল তার মেয়ে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সাবিবা ছোট থেকেই বিজ্ঞানকে জানতে ও প্রতিনিয়ত নতুন বিষয় শিখতে ভালোবাসে আর এই ভালো লাগা আসে তার বাবাকে দেখে। সাবিবার বাবা তার জীবনের অনেকটা সময় বিজ্ঞানের প্রতি নিবেদন করেছেন । সাবিবা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে থাকে এবং অনেকবার স্কুল ও কলেজের বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
এবার গল্পে আসা যাক, সাবিবার বাবা একজন প্রকৌশলী। তিনি ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি তার মেয়ে সাবিবার মাঝেও অজানাকে জানার আগ্রহ দেখতে পান । মেয়ের আগ্রহ দেখে তিনি সাবিবাকে বিজ্ঞানবিষয়ক চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহী করতেন । সাবিবার কাছে তার বাবা সব থেকে প্রিয় ও সেরা মানুষ।সে তার বাবার থেকে অনেক কিছু শিখেছে এবং প্রতিনিয়তই শিখছে।
একদিন, সাবিবা তার বাবার সাথে বসে টিভিতে সংবাদ দেখছিলো তখন হঠাৎ একটি প্লেন দুর্ঘটনার খবর দেখে এবং ঠিক তখনই সাবিবার ফোনে একটা কল আসে এবং সে জানতে পারে যে এই দুর্ঘটনায় তার এক কাছের বন্ধু নিহত হয়। এই ঘটনায় সাবিবা খুবই মর্মাহত হয়। এর কিছুদিন পর…….
একদিন সে ভাবে, প্লেন দুর্ঘটনা এড়াতে কী করা যায়। এবং সে মনে মনে পরিকল্পনা করে যে এমন একটি বিমান বানাবে যেটা কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে আগাম সংকেত দেবে। প্লেনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্লেনের উপরের অংশটা সেন্সর এর সাহায্যে খুলে যাবে এবং প্রতিটা যাত্রীদের কাছে অটো প্যারাসুট চলে আসবে। যাত্রীরা সেই প্যারাসুট ব্যবহার করে অটো নিরাপদ স্থানে ল্যান্ড করতে পারবে।সাবিবা তার গবেষণার জন্য অনেক দিন ধরে পরিশ্রম করে। সে অনেক বই পড়ে এবং অনেক গবেষণাপত্রও পড়ে। সে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর সম্পর্কে জানতে পারে। সে জানতে পারে যে, সেন্সর ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়। সে এই ধারণা থেকেই তার প্লেনটি আবিষ্কারের পরিকল্পনা করতে থাকে।
এবং আস্তে আস্তে এই পরিকল্পনা থেকে সাবিবা প্রথমে একটি মডেল প্লেন তৈরি করে। এই মডেল প্লেনে সে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর লাগায়। সে এই সেন্সরগুলোকে একটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে। কম্পিউটার সেন্সরগুলো থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং সেই সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করে। যদি কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে কম্পিউটার একটি সতর্কতা সংকেত পাঠাবে।
সাবিবা এই মডেল প্লেনটি দিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। সে দেখে যে, এই প্লেনটি তার প্রত্যাশা অনুযায়ী মোটামুটি ভালোভাবেই কাজ করতে পারছে।
সাবিবা এই বিষয়ে তার বাবার থেকেও অনেক সাহায্য পায় এবং দেখতে দেখতে সে তার ভার্সিটি জীবন পার করে ফেলে…এবং ততদিনে সে একজন ভালো গবেষক হয়ে যায় এবং নিজের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালু করে।
সেখানে সে তার মডেল প্লেন নিয়ে কাজ করে এবং তার প্লেনটিকে আরও উন্নত করে।
সে প্লেনের বিভিন্ন অংশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আরও বেশি উন্নত সেন্সর লাগায়। সে কম্পিউটারের সফটওয়্যার আরও উন্নত করে।
সাবিবার গবেষণা অনেক দিন ধরে চলে। এবং তাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, সে অনেকবার ব্যর্থও হয় । কিন্তু সে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না। সে তার লক্ষে লেগে থাকে,অবশেষে, তার কঠোর পরিশ্রমের ফল আসে। অবশেষে সে এমন একটি প্লেন তৈরি করে যা তার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কার্যকর।
সাবিবার আবিষ্কার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমনকি অনেক দেশ এই প্লেনটি ব্যবহারের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। সাবিবা তার আবিষ্কারের জন্য অনেক পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও সে বিশ্বের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে।
মেয়ের সাফল্যে তার বাবা অনেক বেশি খুশি হন এবং সাবিবাকে বলেন, "সাবিবা, তুমি একজন মেধাবী মেয়ে,তুমি এমন একটি
অটো - প্যারাসুটযুক্ত প্লেন”আবিষ্কার করেছো যা আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্জন। এখন তোমার উচিত এই মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা। তোমার মেধার সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার প্রয়োজন।
সাবিবা তার বাবার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে শুধু প্লেন আবিষ্কারের মধ্যই তার জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং সে তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে এমন এমন সব আবিষ্কার করতে থাকে যা পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ জায়গা করে তোলে।
একদিন, সাবিবা তার আবিষ্কারের জন্য একটি সম্মাননা অনুষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ পায়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সে তার কাছের বন্ধুর কথা স্মরণ করে বলে, “আমার বন্ধু প্লেন দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম।সে আমার খুব কাছের একজন বন্ধু ছিল এবং প্লেন এর নাম আমার বন্ধুর নামে রাখতে চাই। আমি আশা করি, এই প্লেনটি দুর্ঘটনার হার কমাবে।”
সাবিবার আবিষ্কারের ফলে প্লেন দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে যায়। সাবিবার আবিষ্কার বিশ্ববাসীর জন্য এক অমূল্য সম্পদ হয়ে দাড়ায়। আবিষ্কারটি বিজ্ঞানের জন্য আরও একটি নতুন মাইলফলক ও বিশাল অর্জন।
সাবিবার বাবা একজন আদর্শ বাবা ও প্রকৌশলী হিসেবে সার্থক ও গর্বিত।
"গল্পটা যদিও কাল্পনিক তবে সাবিবার গল্পটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মেধা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারি। আমরা আমাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারি।আমাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ জায়গা করে তুলতে পারি। মেধার সঠিক ব্যবহার ও প্রয়োগ মানবজীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করে তুলতে পারে।"