Bioluminescent

গত শতকে পৃথিবী অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে তন্মধ্যে টাইম মেশিন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে।কিন্তু অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছে পৃথিবীর মানুষ।মানুষ আজ সূর্যের আলোটাও ঠিক মতো পাচ্ছে না। আর হয়তো বেশিদিন এই আলোটাও থাকবে না। ওদিকে পাওয়ার সেলগুলোতেও শক্তি প্রায় শেষ। কিছু একটা করতে হবে

ক্রমশ ঘনিভূত হতে থাকা এই অন্ধকারে আর থাকা যাচ্ছে না।সময়টা ভয়ংকর হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।এখানকার এই দুর্যোগ থেকে বাচঁতে কিছু একটা করতে হবে আমায়, তাই টাইম মেশিনের স্টেশনের দিকে এগিয়ে চলেছি। আমি এখনকার সময় থেকে অনেকটা পিছিয়ে সেই সময়এ যেতে চাই যখন আমার দাদা বেচেঁ ছিলেন।

বাবা সবসময় বলতেন,ফিদাহ তোমাকে তোমার দাদার মতো বড় বিজ্ঞানী হতে হবে। আমি তার মতো বিজ্ঞানী হয়েছি।তবে ততো বড় নয়।দাদার রিসার্চ পেপারগুলো আমি দেখেছিলাম, সোলার পাওয়ার, কেমিক্যাল বন্ডিং ইন সান এইসব নিয়েই তিনি কাজ করতেন। তাই শেষ চেষ্টা, যদি কিছু করতে পারি।

টাইম স্টেশনে এখন তেমন মানুষ দেখা যায় না, গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া এখান্টায় এখন আর কেউ আসে না, তাছাড়া সাধারণের জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞাও মনে হয় রয়েছে। ইয়েলো রে মেশিনটাতে আমি উঠে পরলাম,অতীতে যাবে এটা। আর স্টেশনে থাকা পিন্ক আর ব্লু রে মেশিন গুলো ভবিষ্যৎ আর বর্তমানে যাবে৷ আমি টাইমটা সেট করার সাথে সাথেই মাথাটা কেমন যেনো ঘুরতে শুরু করলো। অল্পক্ষণ পরেই আবার সবটা থেমে গেলো। কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই আবার ঘুরতে শুরু করলো। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।যখন আমার হুশ ফিরলো দেখলাম আমার চারপাশে ভীষণ আলো, আমার কাছে সপ্নের মতো লাগছে, এতো আলো!! কতদিন এতো আলো দেখিনা।আমি বুঝতে পারছি আমি আমার গ্রামে।বাবার মুখে বর্ণনা শুনেছিলাম, যদিও আমি এখানে কখনো আসিনি, দেখিওনি।চারপাশে অনেক আলো,পাখির কলতান, গাছপালা অসম্ভব সুন্দর একটা গ্রাম।

আমি একটা মাটির রাস্তার উপর হাঁটছি।বাবার সব কথাগুলো খুব মনে পরছে -বাবা বলতেন মাটির গন্ধে একটা টান থাকে, একটা আবেগ থাকে। আমি ভাবতাম বাবার গ্রামের প্রতি অতি ভালো লাগাই তাকে এরকম মনে করায়।কিন্তু আজ বুঝতে পারছি এটা একটা অন্যরকম অনুভূতি।আমি কিছু মানুষকে রাস্তায় পেলাম, তাদের দাদার কথা জিজ্ঞাসা করলে তাদের চেহারায় শ্রদ্ধার ছাপ স্পষ্ট।বাড়ির ঠিকানা আর দাদার রিসার্চ ঘর এসব কোথায় আছে তা মোটামুটি ভাবে জেনে নিলাম। বিকালের অপেক্ষায় আছি আমি। হঠাৎ অপরিচিত মানুষ দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে। অযথা কাউকে বিরক্ত করতে বা নিজে অস্বস্তিতে পরতে চাইছি না এখন।

সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। আমি সারাদিন ঘুরলাম - ফসলের মাঠ, পুকুরের পাড়, বনবাদাড় আরও অনেক জায়গায়।দাদার বিশেষ ঘরটাতে কিচ্ছুক্ষণ পর পরই দূর থেকে দেখে যেতাম, একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ঘরটাতে তেমন আলো নেই।কিন্তু সন্ধার পর সবুজাভ হলুদ আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো পুরো ঘরটা। আমি ভয় পাচ্ছিলাম দাদা ভেতরে থাকবেন এই ভেবে। কিন্তু তিনি ছিলেন না। আমি ঘরে ঢুকলাম, আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।। আমার মনে হতে লাগলো আমি চোর, নিজের ঘরের চোর৷ আমি সেই সবুজাভ হলুদ আলোর উৎস খুঁজে পেলাম।কিছু কাঁচের বোতলে আলোগুলোর উৎস। বোতলগুলোর কোনোটিতে জোনাকিপোকা, কিছুতে আবার কোনো এক বিশেষ প্রজাতির মাশরুম। কিন্তু এগুলোর সব গুলোই আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো ঘরটাতে।আমি কিছু কাগজ পেলাম।দাদার রিসার্চের কাগজ।আমি সব গুলো পড়লাম। বুঝতে পারলাম যে, আলোর উৎস সূর্য যে তার আলো হারিয়ে ফেলবে তা তিনি জানতেন।তিনি তাই এই বায়োলুমিন্সেন্ট গুলো থেকে কৃত্রিম আলো তৈরির চেষ্টা করছিলেন। যদিও পর্যাপ্ত ডাটার অভাবে তিনি সেটা সম্পূর্ণ করতে পারেননি।তবে আমি করবো।

সকালের সূর্যটা উঠে পরার সাথে সাথেই আমি চলে গেলাম। আমার পৃথিবিতে। আমি আমার ল্যাবের সামনে এসে পরেছি।কাঁচের দরজা খুলে ফেইস স্ক্যান আর ফিংগারপ্রিন্ট দিয়ে ভেতরে ঢুকে আমি কাজ করতে লাগ্লাম।দাদার অসমাপ্ত কাজটা যে আমাকে শেষ করতেই হবে।

এক মাস পর.... আমার নিজেকেই আমি নিজে চিন্তে পারছিনা। অগুছালো চুল আর রক্তজবার মতো লাল হয়ে রয়েছে চোখ।গত এক মাস ফটোসিন্থেসিস করার কৃত্রিম উপায়, আর জৈবদু্যতি দিয়ে লাইট, ল্যাম্পপোস্ট আর আলোর জন্য সূর্যের নির্ভরতা কমাতে কৃত্রিম আলো তৈরি করেছি।আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে দেখলাম আমার চোখে আলো পরছে। আমার চোখের পাতা গুলো আলোতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সইতে পারছে না।। তবু্ও আমার ভীষণ ভালো লাগছে।মানুষ আবার পেয়েছে আলোর সন্ধান।হোক না সেটা কৃত্রিম,তবুও অন্ধকার তো না।এই আলো উপচে পরুক সবার হৃদয়ে,দূর করে দিক সব অন্ধকার।চারিপাশে থাকুক আলোর সমাহার।