প্রিয় ফারহা

প্রিয় ফারহা

আজকে ফারহার ঘুম অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক আগেই ভেঙে গেল। কারণ আজকে ওর ১৩ তম জন্মদিন। নাভানা-জিলানী দম্পতির একমাত্র মেয়ে সে। পুরো ঘর রঙিন কাগজ, পোস্টার এবং পুতুল দিয়ে সাজানো। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে সে পায়ের একটা সুন্দর জরি দেওয়া ডায়েরী দেখতে পেল। যদিও কভারটা কেমন যেনো একটু মলিন, ভাজ হওয়া।

গায়ের উপরে সুন্দর করে লেখা,

"জন্মদিনে ফারহাকে, বাবার উপহার"

ফারহা একটু মিষ্টি হেসে ডায়েরীর প্রথম পাতাটা খোলে।

১১/১২/১২

আমার ফারহা,

শুভ জন্মদিন ফারহামণি। আর কিছুক্ষণ পর তোমার ১৩ তম জন্মদিন। বাবা কালকে তোমাকে একটু বকা দিয়েছিল তার জন্য অনেক সরি মামনি। তুমি এখন তোমার টিনেজে পা দিচ্ছো, হয়তো স্কুলে এ বিষয়ে আরো জানবে। তবে এ বয়সটায় বাবা মায়ের সাথে বাচ্চাদের একটু দূরত্ব তৈরি হয়। হয়তো বা আমি তো বা আমি আর তোমাকে আগের মত বুঝতে পারবো না। সে জন্যেই তোমাকে এই ডায়েরী উপহার দিলাম। তোমার যা কিছু বলতে অসুবিধা হবে, আমাকে লিখে জানাবে। এখন জলদি তৈরি হয়ে নাও। তুমি অনেকদিন ধরে নতুন অ্যামিউসমেন্ট পার্কটায় যেতে চাইছিলে। আজ আমরা সেখানে যাবো। আর তোমার এই ডায়েরীটা নিয়ে এসো কিন্তু। আমি চাই আজ থেকেই তুমি লেখা শুরু করো। আমি একটু দরকারে, আগেই বেরিয়ে যাচ্ছি। তোমার মা তোমাকে নিয়ে পার্কে আসবে। বাকি পুরোটা সময় আমি তোমাকে দেব, প্রমিজ।

বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে মামনি ।

ইতি,

বাবা

ফারহার মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। কিন্তু পাতাটা ওল্টাতেই ফারহা দেখলো মাঝের কিছু পেজ ছেড়া। এর পরের পেজে একটা অদ্ভুত হেডিং দেওয়া।

১২/১২/১২

Iteration 3

………………

………………

বিশ্বব্রহ্মান্ড কতই না বড়, কত কথা লুকিয়ে রেখেছে নিজের বিশালতার মাঝে, লাখো রহস্য আছে এর চাদরে মুড়িয়ে। এরই মাঝে আছে কতশত না জানা গল্প । পড়ন্ত বিকেলে হসপিটালের করিডোরে চিন্তার পায়চারি করছেন রাকিন সাহেব। হঠাৎ একজন ডাক্তার এসে তাকে দুঃসংবাদ দিলেন।

- দুঃখিত, আপনার স্ত্রী-কন্যা দুজনেই মারাত্মক আহত হয়েছিলো। হাসপাতালে আনার পর তারা আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে দুজনেই হাইপোভোলেমিক শকে যায়, পরবর্তীতে মারা যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে যা মালামাল পেয়েছি সেগুলো দ্রুতই আপনি পেয়ে যাবেন।

একজন নার্স এসে তাদের কাছ থেকে পাওয়া মালামালের একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। মেয়ের জন্মদিনে উপহার দেওয়া ডায়েরিটার মলিন হাল দেখে আরো ভেঙ্গে পড়লেন তিনি। রাকিন সাহেবের কাছে মনে হচ্ছে তার পৃথিবী আবার ভেঙে পড়ছে। সব তছনছ হয়ে যাচ্ছে আগের মত।

“না, এটা হতে পারে না”

“বারবার আমি হারাতে পারবো না”

হাসপাতাল থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বের হওয়ার সময় বিড়বিড় করে এই কথা বলছিলেন তিনি।

দ্রুত নিজের অফিসে আসেন তিনি। পরমাণু শক্তি কমিশনের সিনিয়র গবেষক হিসেবে কাজ করছেন রাকিন সাহেব। অফিসের বড় স্টোররুম টার চাবি নিজের কাছেই রাখেন তিনি। কেনো এমন করেন তা দপ্তরিরা আজও জানে না, কারণ এখন পর্যন্ত তারা ভাঙাচুরো আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই দেখেনি সেখানে।

শশব্যস্ত হয়ে, ভাঙাচুরোর ভেতর থেকেই কিছু জিনিস বের করে একটা যন্ত্র বানিয়ে ফেলেন তিনি। এতো নিপুণতার সাথে, যেনো আগেও এমনটা করেছেন। দ্রুত যন্ত্রটায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মেয়েকে উপহার দেওয়া সেই ডায়েরীটাতে লিখতে বসলেন।

১২/১২/১২

Iteration 1

আদরের ফারহামণি,

আমি তোমার ডায়েরীতে লিখছি দেখে কিছু মনে করো না। বাবা একটা ভুল করে ফেলেছে। জন্মদিনে শুরু থেকেই তোমাকে সময় না দিয়ে আবার কাজে গিয়েছি। আমি খুব সরি মামনি। তাই বলে তুমি রাগ করে মাকে নিয়ে এতো দূরে চলে যাবে? তুমি চাইলেও আমি তোমাদের দূরে যেতে দেবো না। আবার ফিরিয়ে আনবো। তোমার মাকেও কোনোদিন যেতে দেইনি, তোমাকেও দেবো না।

প্লিজ বাবার ওপর রাগ করো না। আমি আসছি। সব ঠিক করে দেবো।

ইতি,

তোমার বোকা বাবা

রাত ৯টা নাগাদ সেই স্টোর রুমটা অনেক আলোকিত হয়ে ওঠে, তীব্র আলো থেমে গেলে দেখা যায় রাকিন সাহেব সেখানে নেই। যে আবিষ্কার আর ব্যবহার করবেননা বলে লুকিয়ে রেখেছিলেন, নিজের কথা ভেঙে তা নিয়েই ছুটে গেলেন অতীতের দিকে, নিজের প্রিয়জনদের বাঁচাতে।

রাকিন সাহেব নিজেকে স্টোররুমেই পেলেন। দ্রুত অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তার অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে দেখা। তার চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে,

-স্যার আপনি কখন আসলেন?

-পরে বলবো, এখন কয়টা বাজে?

-প্রায় ১২ টা।

-কত তারিখ?

-১২ ডিসেম্বর।

-তোমার বাইকটা এনেছো? আমাকে চাবিটা দাও।

-এনেছি, গ্যারেজের ডান দিকে। কিন্তু, স্যার আপনার গাড়ি?

-সময় নেই, দ্রুত দাও, তুমি আজ গাড়িটা ব্যবহার করো ।

-স্যার সামনের ব্রেকে একটু সমস্যা……

বাইকের চাবি নিয়ে দ্রুতো রাকিন সাহেব তার বাসার কাছের বাসস্ট্যান্ডে যাতে থাকলেন। বহুবছর পর বাইকে চড়ায় একটু অসুবিধা হচ্ছিল। পথে জ্যামে আটকা পড়ায় দ্রুত তার স্ত্রীকে ফোন করলেন।

-হ্যালো, নাভানা। শোনো, তোমরা এখন কোথায়? যেখানেই থাকো, গাড়ি থেকে নামো। আমি এসে তোমাদের নিয়ে যাবো।

-কি হয়েছে? এতো চেঁচাচ্ছ কেনো? আমরা এখন মার্কেটের সামনে।

-প্লিজ তোমরা গাড়ি থেকে নেমে দাড়াও, আমি আসছি তোমাদের নিতে।

-আচ্ছা আচ্ছা, নামছি ।

রাকিন সাহেব মার্কেটের সামনে এসে রাস্তার ওপারে স্ত্রী-কন্যাকে সুস্থ দেখে শান্তির শ্বাস ফেলে। তাকে দেখে একটু বিরক্ত মুখে তার দিকে এগিয়ে আসছিলেন তার স্ত্রী। হঠাৎ একটা ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চোখের সামনে পিষে দিয়ে যায় তাদের। যে কালো অধ্যায় ঠেকানোর উদ্দেশ্য নিয়ে রাকিন সাহেব এসেছিলেন, তা যেনো নিমেষেই আবার ঘটে গেলো। হাটু মুড়ে রাস্তায় বসে পড়েন তিনি, মুখ দিয়ে তীব্র আর্তনাদ।

১২/১২/১২

Iteration 2

প্রিয় ফারহা,

মনে আছে যেদিন আমি রান্না করার চেষ্টা করলাম। পুরো রান্নাঘর নোংরা হয়ে যাওয়ায় কী বকা খেলাম তোমার মার কাছে। তুমি আমাকে বকা থেকে বাচিয়েছিলে। বাবা আবার ভুল করে ফেলেছে। বাবাকে আরেকবার সুযোগ দাও। আমার আরো আগে পৌছানো দরকার ছিল। এবার আর কোনো ভুল করবো না।

ইতি,

তোমার ভুল করা বাবা

আরেকবার রাকিন সাহেব ফিরে গেলেন অতীতে। তবে এবার একটু আগে। অফিস থেকে বের হওয়ার পথেই অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে দেখা।

-স্যার আপনি এতো আগে?

-তোমার বাইকের চাবিটা দাও।

-কিন্তু স্যার …

-আমার গাড়ি আজ তুমি নাও, বাইক গ্যারেজের ডান দিকে আছে, সামনের ব্রেকে একটু সমস্যা। আমি জানি সব। তুমি দাও।

এবার আর ভুল করলেন না, আগেই ফোন করলেন স্ত্রীকে__

-হ্যালো নাভানা, তোমরা কোথায়? একা বের হবে না, আমি এসে তোমাদের নিয়ে যাবো।

-আমি রান্নাঘরে, ফারহা আমার পাশেই/ তুমি নিজেই তো বললে আমরা যেনো চলে আসি__

-এখন বলছি এসো না। আমি নিতে আসবো তোমাদের।

-আচ্ছা, আমরা রেডি হয়ে…..

না, আর কিছু শোনা যায়নি ওপাশ থেকে। এক বিকট শব্দের পরে লাইন কেটে যায়। রান্নাঘরে নাভানা অন্যমনস্ক থাকা অবস্থায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আরেকবার সব শেষ হয়ে যায় রাকিন সাহেবের।

আমরা যা চাই, তাই যে জীবনে পাবো, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা চেষ্টা করি, কিন্তু কপালের লিখন বদলানোর ক্ষমতা কি সম্ভব? সেই অসম্ভব কে সম্ভব করতে পাগল হয়ে উঠেছেন রাকিন সাহেব। আরেকবার তিনি টাইম মেশিন টি চালু করলেন। কিন্তু এবার তিনি পৌছালেন অদ্ভুত এক জায়গায়।

একটা যেনো গুহার মত জায়গা। তবে গুহার দেয়াল, ছাদ, মাটি সব যেনো একেকটা আলোর উৎস। আলোর এমন এক ঘূর্ণিপাক, ঠান্ডা হাওয়া, বাতাসের শো শো শব্দ জায়গাটাকে আরো অদ্ভুত করে তুলেছে। সামনে দুজন মানুষকে হেটে আসতে দেখলেন রাকিন সাহেব। কোট, টাই পরা শ্বেতাঙ্গ ব্যাক্তিদ্বয়কে দেখে একটু ভড়কে গেলেন তিনি। নিজের পরিবারকে বাচাতে উন্মুখ রাকিন সাহেব বললেন,

-কে আপনারা? আমি কোথায়?

-খুব তাড়ায় আছেন মনে হচ্ছে মি. রাকিন। আসুন একটু বসি। আমাদের কাছে অনেক সময় আছে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।

কোনো বিপদ আঁচ করতে পেরে, রাকিন সাহেব নিজের টাইম মেশিনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু যন্ত্রটি সেখানে নেই। এবার উলটো দিকে দৌড়াতে শুরু করলেন রাকিন সাহেব। কিন্তু বেশ খানিকক্ষন দৌড়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলেন তিনি, যেনো একটা লুপের ভেতর আছেন তিনি।

-দৌড়ে লাভ নেই মি. রাকিন, আসুন আমরা কথা বলি।

ক্ষোভে ভরা দৃষ্টি নিয়ে আসন গ্রহণ করেন রাকিন সাহেব। অপরপাশ থেকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ানো হলেও তিনি পাত্তা দিলেন না। হাতটা পেছনে নিতে নিতে অপরজন বললেন_

-আমি Agent Smith, আর ইনি আমার সহকর্মী Agent Buff, আমরা Time Police এর কর্মচারী। আমাদের কাজ হল আপনার মত যারা কপালের লিখন খন্ডাতে যেয়ে space time equilibrium কে নষ্ট করে, তাদের থামানো ও গ্রেফতার করা।

-আমাকে কি গ্রেফতার করতে এসেছেন? জেলে রাখবেন?

-Space Time Act - 2079 এর আওতায়, ২০৭৯ এর আগে কেউ সময়যাত্রা করলে তাকে ততক্ষণ গ্রেফতার করা যাবে না যতক্ষণ না সে ৩ বারের বেশি space time fabric এ কোনো পরিবর্তন আনে। আপনি যদি আরেকবার অতীতে যেয়ে কোনো পরিবর্তন করলে, অনন্তকালের জন্য আপনাকে বন্দি করা হবে।

-কিন্তু আমিতো মাত্র দুবার অতীতে গিয়েছি, আমার এখনো একটা সুযোগ বাকি।

-ব্যাপারটা কি সত্যি? নাকি সব জেনেও না জানার ভান করছেন? একই তারিখে, এর আগেও নিজের প্রিয়জনকে চিঠি আপনি লিখেছেন, তাইনা?

১২/১২/৯৭

Iteration 0

প্রিয় নাভানা,

আমাদের তো এক হওয়ার কথা ছিল। সেই স্কুল লাইফ থেকে আমরা একসাথে। আমার সব কষ্টে তুমি আমার পাশে ছিলে। সব চড়াই উৎরাই পার করে যখন আমাদের এক হওয়ার কথা, তখনই কেন তুমি দূরে চলে গেলে। আমি তো তোমাকে ছাড়া কিছুই না । ১৫ বছর ধরে আমি অপেক্ষা করছি আজকের দিনের। তুমি বলতে না, একদিন আমি বড় কিছু আবিষ্কার করব? আমি করেছি। পৃথিবীর প্রথম টাইম মেশিন আমিই বানিয়েছি। একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি ।

ইতি,

তোমার ভগ্ন প্রেমিক

-কি, মি. রাকিন , মনে পড়ে? আজ থেকে ১৫ বছর আগে আপনার ছোটবেলার প্রেমিকার সাথে আপনার রাস্তায় ঝগড়া হয়। এরপর হঠাৎ একটা ধাক্কা পান আপনি, এরপর এক বিকট আওয়াজ। বাস চাপা দিয়ে যায় নাভানাকে। আপনি সবেমাত্র পরমাণু কমিশনে চাকরি পেয়েছেন। সময়ের সিদ্ধান্তকে আপনার ওপর করা ভুল মনে করে আপনি সেই ভুল শোধরাতে চেষ্টা করেন। বানিয়ে ফেলেন সেই মহাযন্ত্র যা আপনাকে অতীত পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। এখনোও তো আপনি সেই চেষ্টাতেই আছেন, তাইনা?

-আমি ওদের কে ফিরিয়ে আনবোই, ওরা এখন মরতে পারে না।

-আপনি নিজেকে সবসময় ঠিক মনে করেন। আপনি কি জানেন সকল সমস্যার মূল আপনি? সেদিন এক্সিডেন্টে নাভানা নয় আপনার মারা যাওয়ার কথা। আমাদের Time Meta Data তাই বলে। কিন্তু সেদিন আপনি নাভানার ভাগ্যকে চুরি করে নেন। সে আপনাকে বারবার মাথা ঠান্ডা করে রাস্তায় হাটতে বলছিল। কিন্তু আপনি তার কথা শোনেননি। সেদিন বাসের নিচে আপনার পড়ার কথা। কিন্তু আপনাকে বাচাতে নাভানা নিজের ভবিষ্যৎ বিষর্জন দেয়। নিজের জীবন আপনাকে দিয়ে যায়। Time Meta Data তে আপনার ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত আপনার data থাকলেও হঠাৎ করে আরো data চলে আসে।

-কি সব আজগুবি কথা বলছেন?

-আজগুবি নয়, এটাই সত্য। space time fabric এ প্রথম গিট আপনিই বেধেছেন মি. রাকিন। আপনিই তৈরি করেছেন নতুন শাখা। এখন আপনিই সেখানে লুপ তৈরি করে space time equilibrium নষ্ট করতে চাইছেন। আমরা তা হতে দিতে পারি না। Time Meta Data তে নাভানার নিজের যথেষ্ট গোছানো জীবন ছিল। নাভানা, ফারহার জীবন আরো অনেক দূর যেতে পারতো। কিন্তু আপনি নাভানার কাছ থেকে তার জীবন, তার ভাগ্য সবকিছুই চুরি করে নিয়েছেন। আবার অতীতে ফেরত যেয়ে তাকেও জীবিত করেছেন।

-এসব অসম্ভব, আমি কখনোই নাভানার জীবন চুরি করতে পারি না। আমি এমন কিছুই করি নি।

-না, মি. রাকিন, না। space time fabric এ সবার জন্য নির্দিষ্ট resource allocated থাকে। আপনার জন্য বরাদ্দ ২৫ বছর পর্যন্তই ছিলো। আপনি যখন নিজেও মারা গেলেন না এবং নাভানাকেও বাচালেন, নাভনার Time Meta Data থেকে আপনার ভাগে resource allocate হয়। আজ নাভানার আর কোনো resource বাকি নেই, সাথে তাই ফারহার ও নেই। তাদের মারা যেতেই হবে। আমরা আপনাকে আরেকবার ঝামেলা তৈরি করতে দিতে পারি না।

হঠাৎ একটু শব্দতে পেছনে তাকাতেই দেখা গেলো, টাইম মেশিনটি আবার জায়গা মত চলে এসেছে।

-আপনার টাইম মেশিন চলে এসেছে। মনে রাখবেন, আপনি যদি এবার আপনার সময়ে ফিরে না যেয়ে অতীতে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে আর কোনোদিন বর্তমানে ফিরতে পারবেন না। আপনি এই টাইমলুপেই ফেরত আসবেন এবং আপনাকে আটক করা হবে। আশা করবো আপনি বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজের সময়ে ফিরে যাবেন।

রাকিন সাহেব এক অসহনীয় যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। তার জীবন থেকে সব হারিয়ে যাচ্ছে যেনো। হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এজেন্ট স্মিথ ও তার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।

-আশা করছি এটাই আমাদের শেষ দেখা হবে মি. রাকিন। বাস্তবতা মেনে নিন। সবকিছু এক জীবনে পাওয়া সম্ভব না।

স্মিথ উলটো দিকে হাটা শুরু করলো। তীব্র আলোর ঝলকানি আর একটা শব্দ করে টাইম মেশিনটি চলে গেলো। স্মিথের মুখে মৃদু হাসি। ঠিক তখনই আবার তীব্র আলো আর শব্দ হয়। এর মানে দাড়ায় একটিই। রাকিন সাহেব তার সময়ে ফিরে না যেয়ে আবার অতীতে গিয়েছিলেন। ক্রোধে ফেটে পড়েন এজেন্ট স্মিথ।

-মি. রাকিন , আপনাকে আমি বলেছিলাম, আপনি ভাগ্য আর বদলাতে পারবেন না। তবুও আপনি অতীতে ফিরে গেলেন। এখন আপনাকে অনন্তকাল ধরে বন্দি থাকতে হবে।

মি. রাকিনের রাকিনের মুখে হাসি। যেনো এক যুদ্ধ জয় করে এসেছেন।

-আপনি ঠিকই বলেছেন এজেন্ট স্মিথ। আমিই সকল সমস্যার মূলে। তাই এবার আমি সমূলে উৎপাট করে এসেছি সব সমস্যা।

রাকিন সাহেবের হাসি এজেন্ট স্মিথের রাগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বললেন__

-Agent Buff, please arrest him. Throw him to eternal confinement.

তখনি time meta data দেখানো যন্ত্রটি বিপ বিপ আওয়াজ করতে লাগলো। স্মিথ দেখতে পেলো ২৫ বছরের পর থেকে রাকিন সাহেবের data গুলো সব মুছে যাচ্ছে। কাপাকাপা কন্ঠে স্মিথ বলল,

-এ আপনি কী করেছেন মি. রাকিন। বাফ, উনি কি করেছেন তুমি কি বুঝতে পারছো?

-Sir, he killed himself in 1997. He erased himself from existence while being alive.

-এর আগে কি কেউ এমনটা করেছে? এখন কী হবে?

-He will soon burn every single atom in his body. Tear apart thousand times within a second, feel pain indescribable. He will turn into cosmic dust, and then, nothing. It would be like he never existed after 1997.

-এ আপনি কী করলেন মি. রাকিন। আপনি এখন এমন যন্ত্রণা ভোগ করবেন যা থেকে অনন্তকাল বন্দি থাকাও সুখের।

রাকিন সাহেবের মুখে তখনো মুচকি হাসি।

-আমি যাদের চাই তারাই যদি না থাকে তবে আমি থেকেই বা কী হবে? আমার হাতে আর কত সময় আছে? আপনি কি আমার শেষ চিঠি ফারহাকে দিতে পারবেন?

-এই হারে, সর্বোচ্চ ৫ মিনিট। চিঠি দেবো নাকি তা কথা দিতে পারছি না। চেষ্টা করবো কোনো আইন না ভেঙে দেওয়া যায় কিনা ।

১২/১২/১২

Iteration 3

আমার ফারহা মামনি,

আমি জানি তুমি মাঝে মাঝে আমার ওপর অনেক রাগ করো। কিন্তু বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারো না। কারণ তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তোমার চেয়েও বেশি। হয়তো মাঝে মাঝে আমিই ভুল করি। তুমি তো আমাকে বারবার ক্ষমা করে দাও। এবার কিন্তু তোমার বাবা সব ভুল একবারে ঠিক করে ফেলেছে। হয়তো তুমি বুঝতে পারছো না, আমি কী বলতে চাচ্ছি। তবে মনে রেখো আমি চাই, তুমি বড় হয়ে তোমার মায়ের মত হও; শান্ত, ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিমতী। সবসময় নিজের ও মায়ের খেয়াল রাখবে ও ভালো হয়ে চলবে। মাকে কষ্ট দিবে না। মনে রাখবে আমি কিন্তু তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি।

ইতি

তোমার বাবা

পরিশিষ্টঃ

ফারহা বুঝতে পারছে না, গিফটে পাওয়া ডায়েরীর মাঝের পাতা কেনই বা ছেড়া আর কেনই বা তার বাবা নিজে না লিখে অন্য কাউকে দিয়ে ডায়েরীটা লিখাবে। বাবা তো আজ বাসায় থাকবে বলেছিল। তাহলে ডায়েরীতে ভিন্ন কথা কেনো লেখা? Iteration 3 এর মানেটাই বা কী? আর Iteration 1,2 বা কোথায়?তার ডাক্তার বাবা জিলানী সাহেবের হাতের লেখা খুবই বাজে। এই নিয়েই কাল রাতে ঝগড়া হয়েছে বাবার সাথে। পোস্টারে কিছু লেখায় বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল সে। বাবা বোধহয় কষ্ট পেয়েছে।

সে গিয়ে দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে,

-সরি বাবা, তুমি রাগ করো না। ডায়েরীতে তুমি নিজেই লিখে দাও আমাকে। অন্য কাউকে দিয়ে না। ছেড়া পৃষ্ঠাগুলোতে কি আমাকে নিয়ে কিছু লিখেছিলে? আমাকে দাও, আমি পড়বো।

জিলানী সাহেব কিছু না বুঝে ভ্রু কুচকে স্ত্রী নাভানাকে জিজ্ঞেস করলেন কী ব্যাপার? তিনি মাথা নেড়ে বোঝালেন যে তিনি নিজেও জানেন না। জিলানী সাহেব তবুও মেয়েকে জড়িয়ে রাখলেন।

Time Screen থেকে সবই দেখছিলেন এজেন্ট স্মিথ ও এজেন্ট বাফ।

-Sir, we could have solved this very easily, why bother so much?

-সেদিন মি. রাকিনের বেঁচে যাওয়া ছিলো ম্যাট্রিক্সের একটা গ্লিচ। আমাদের কাজ সেই গ্লিচ টা ঠিক করা। The glitch fixed itself. Close the glitch report agent buff.

এজেন্ট বাফ একটা ফাইল বন্ধ করলেন। Glitch Report - 12/12/12 নামের একটি ফাইল শুধু জানলো, রাকিন নামের কেউ এই বিশ্বে কোনো এক সময় ছিল ।